অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : সৌদি আরবের পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিরিয়ার সাথে পূর্ণাঙ্গ সম্পর্ক স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করার খবর দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক টুইটার-বার্তায় বলা হয়েছে, সৌদি আরব ও সিরিয়া হচ্ছে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। তাই আরবদের অভিন্ন কর্মকাণ্ড এগিয়ে নেয়া এবং এ অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষার স্বার্থে দামেস্কের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে।
এদিকে, সৌদি আরবের মন্ত্রীদের একটি প্রতিনিধিদল সেদেশের রাজা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সাথে দেখা করে আরব লীগসহ বিভিন্ন সংস্থার বৈঠকে সিরিয়ার প্রতিনিধি দলের উপস্থিতির সুযোগ করে দেয়ার জন্য আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
সিরিয়ার সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ঘোষণার পরপরই দামেস্ক কর্তৃপক্ষও রিয়াদে তাদের কনস্যুলেট স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিরিয়া ও সৌদি আরবের জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আলোকে এবং আরবদের অভিন্ন বিশ্বাস ও উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে সিরিয়া সরকার সৌদি আরবের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
এ ঘোষণার ফলে আর কিছু দিন পর রিয়াদে অনুষ্ঠেয় আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের যোগ দেয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেল। প্রেসিডেন্ট আসাদের সম্ভাব্য রিয়াদ সফরের গুরুত্ব এতোটাই বেশি যে আরব দেশগুলোর সাথে সিরিয়ার সম্পর্ক উন্নয়ন এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর ইতিবাচক বিরাট প্রভাব পড়বে। আরব লীগের জোটে সিরিয়াকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে সৌদি আরব সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে যেমনটি এই জোট থেকে সিরিয়াকে বহিষ্কারেও তাদের মুখ্য ভূমিকা ছিল। তাই সৌদি আরবের আগ্রহ না থাকলে হয়তো সম্পর্ক এতদূর গড়াত না।
মোটকথা, সিরিয়া ও সৌদি সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পেছনে দামেস্কের ব্যাপারে রিয়াদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন প্রধান ভূমিকা রেখেছে। চীন ও রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন এবং বিভিন্ন ইস্যুতে আমেরিকার চাপ উপেক্ষা করা থেকে সৌদি আরবের প্রাচ্য নীতিকে প্রাধান্য দেয়ার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে তেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ওয়াশিংটনের আহ্বানকে অগ্রাহ্য করা, চীনের মধ্যস্থতায় ইরানের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা, সিরিয়ার সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা প্রভৃতি ঘটনা থেকে সৌদি নীতিতে পরিবর্তনের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং এই নীতির ওপর সৌদি আরব অটল রয়েছে।
অবশ্য আরব লীগে ফিরে আসা সিরিয়ার জন্যও জরুরি ছিল। কেননা এতে করে যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়ার পুনর্গঠন কাজ তরান্বিত হবে এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায়ও তা ভূমিকা রাখবে। এরই আলোকে বলা যায় দামেস্ক-রিয়াদ সম্পর্ক দুদেশের জন্যই সমান গুরুত্বপূর্ণ এবং দুদেশের জনগণের জন্যই কল্যাণকর।
কিন্তু, পশ্চিম এশিয়ায় প্রতিরোধ শক্তিগুলোর সাফল্যের পর সিরিয়া-সৌদি সম্পর্ক স্থাপন এবং ইরান ও সৌদির মধ্যকার সম্পর্ক স্থাপনকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না আমেরিকা ও ইসরাইল। তারা প্রকাশ্যেই এই দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কের বিরোধিতা করেছে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে আরব লীগে সিরিয়ার প্রত্যাবর্তন এবং রিয়াদ-দামেস্ক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আমেরিকা ও ইসরাইলের জন্য চপেটাঘাত। কেননা এতে করে সিরিয়া সরকারকে উৎখাত করে ওই দেশটিকে খণ্ডবিখণ্ড করার ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে গেছে। খোদ মার্কিন গণমাধ্যমগুলোই ওই ষড়যন্ত্রের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেছে এবং বলেছে এতে ইসরাইল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
Leave a Reply